ঢাকাপ্রতিদিন ক্রীড় ডেস্ক : ২৫ বছর ধরে ক্রিকেট বিশ্বকাপে নিয়মিত বাংলাদেশ। ফুটবলে বিশ্বকাপ খেলা এখনও দূরের বাতি। দেশের দ্বিতীয় জনপ্রিয় খেলার আগেই বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের হকি। যে ফেডারেশনের কর্তারা শুধু চেয়ার নিয়ে কাড়াকাড়ি করেন, মাঠের খেলায় মনোযোগ দেন না; বছরের পর বছর ধরে নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হকি খেলোয়াড়রাই কিনা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার ঘাটতি, তিন মাসের প্রস্তুতি নিয়ে ওমানের মাসকটে অনূর্ধ্ব-২১ এশিয়ান কাপে মেহেরাব হাসান-সৈকতরা নিজেদের নিংড়ে দিয়েছেন।
গতকাল স্থান নির্ধারণী ম্যাচে থাইল্যান্ডকে ৭-২ গোলে বিধ্বস্ত করে জুনিয়র বিশ্বকাপে খেলার টিকিট নিশ্চিত করেছে লাল-সবুজের দলটি। দেশের হকির ইতিহাসে বয়সভিত্তিক কিংবা সিনিয়র পর্যায়ে এই প্রথম বিশ্বকাপের টিকিট পেল মওদুদুর রহমান শুভর দল। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠিত হবে জুনিয়র বিশ্বকাপ। এই জয়ে বাংলাদেশ আজ চীনের বিপক্ষে পঞ্চম স্থানের জন্য লড়বে। সেই ম্যাচে হারলেও ষষ্ঠ হবে। যেটা বিশ্বকাপে খেলতে যথেষ্ট। হকিতে ঐতিহাসিক অর্জনে পুরো দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
স্বপ্নটা ছিল আকাশচুম্বী। জুনিয়র এশিয়া কাপে সেরা ছয়ে থাকতে পারলেই মিলবে বিশ্বকাপের টিকিট। সেই যাত্রায় স্বাগতিক ওমানকে প্রথম ম্যাচে হারানো। গ্রুপ ‘বি’তে এর পর শক্তিশালী পাকিস্তানের কাছে উড়ে যাওয়া। তাতেও মনোবল ভাঙেনি খেলোয়াড়দের। বরং তৃতীয় ম্যাচে এসে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ২-২ গোলের ড্রয়ে আত্মবিশ্বাসটা আরও বেড়ে যায় জীবন-সাজুদের। গ্রুপের শেষ ম্যাচে চীনের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করার পর বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্নপূরণ একেবারে হাতের নাগালে চলে আসে বাংলাদেশের। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন থাইল্যান্ডের বিপক্ষে জয়। যে অঙ্কের সমাধান নিখুঁতভাবে করেছেন শুভর শিষ্যরা।
গতকাল ম্যাচের ১৬ মিনিটের মধ্যেই তিন গোল আদায় করে লাল-সবুজের দলটি। ম্যাচের ৩ মিনিটে মোহাম্মদ জয়ের ফিল্ড গোল দিয়ে শুরু। ৬ মিনিটে আমিরুল ইসলামের পেনাল্টি কর্নার গোলে ব্যবধান গিয়ে দাঁড়ায় ২-০তে। দ্বিতীয় কোয়ার্টারের প্রথম মিনিটে আব্দুল্লার ফিল্ড গোল। দ্বিতীয় কোয়ার্টারের শেষ মিনিটে থাইল্যান্ডের হয়ে চুয়েমকে ক্রিস্টানা এক গোল পরিশোধ করেন। তাতেও দমেনি বাংলাদেশ। বিল্ডআপ খেলে একের পর এক গোল করে প্রতিপক্ষকে নাকাল করেন বাংলাদেশের যুবারা। ম্যাচে বড় ব্যবধানে জিততে সেভাবে বেগ পেতেও হয়নি।
তৃতীয় কোয়ার্টারে গিয়ে আরও বিধ্বংসী রূপে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। এই অর্ধে থাইল্যান্ডের জালে তিনবার বল পাঠায় তারা। ৩৪ মিনিটে সতীর্থের পাসে মোহাম্মদ হাসান রিভার্স হিটে জাল কাঁপান। ৩৫ মিনিটে আবার থাইদের দাপট। পেনাল্টি কর্নার থেকে ফুমি ক্রিস্টানা দারুণ এক হিটে স্কোরলাইন ৪-২ করেন। ২ মিনিট পর বাংলাদেশ আক্রমণ থেকে পঞ্চম গোল করতে সমর্থ হয়। মোহাম্মদ ইসলামের পাসে মোহাম্মদ খান শুধু স্টিক দিয়ে বলের গতি পরিবর্তন করে দেন। ৩৯ মিনিটে হয়েছে ষষ্ঠ গোল। মোহাম্মদ জয় রিভার্স হিটে দলকে ষষ্ঠ গোল এনে দেন। চতুর্থ ও শেষ কোয়ার্টারে গিয়েও গোলের আনন্দে মেতে ওঠে বাংলাদেশ শিবির। ৪৯ মিনিটে আব্দুল্লাহর ফিল্ড গোলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি চলে আসে বাংলাদেশের হাতে।
কিছুক্ষণ পর আম্পায়ার খেলা শেষের বাঁশি বাজালে অন্যরকম দৃশ্যে ফুটে ওঠে মাসকটে। ডাগআউট থেকে একজন লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে দৌড়ে মাঠের মধ্যে ঢুকে পড়েন। সবাই একসঙ্গে পতাকা হাতে উচ্ছ্বাস করতে থাকেন। ঐতিহাসিক মুহূর্ত ধরে রাখতে কেউ কেউ সেলফি তুলেছেন। এমন আনন্দ তো মেহরাবদেরই মানায়।
ঢাকাপ্রতিদিন/এআর