ব্যাংকে প্রস্তাবিত বাজেটের ১০ শতাংশ জমার ধারা নিয়ে নির্মাতাদের আপত্তি

ব্যাংকে প্রস্তাবিত বাজেটের ১০ শতাংশ জমার ধারা নিয়ে নির্মাতাদের আপত্তি

আহমেদ জামান শিমুল
১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:৪৫ | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ২২:০৭

ঢাকা: পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদানের নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছে সরকার। গেল ৬ মার্চ প্রকাশিত নীতিমালার ৬.৫ ধারা অনুযায়ী, অনুদানের জন্য আবেদনকারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তার ছবির প্রস্তাবিত বাজেটের ১০ শতাংশ জমা থাকতে হবে। আর পুরো নীতিমালার এই ধারাটি নিয়ে আপত্তি নির্মাতাদের। তাদের বক্তব্য, এটি অনুদানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করবে। ধারাটি পুনর্বিবেচনার জন্য তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

নির্মাতা নুরুল আলম আতিক বিষয়টি নিয়ে বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করে সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথমত অনুদানের জন্য যারা আবেদন করেন তাদের ক্ষেত্রে আমরা ধরে নিতে পারি, তারা মূলধারার বাণিজ্যিক সার্কিটের লোক নন। এমনকি নিয়মিত সার্কিটে যে সিনেমা তৈরি হয়, তার বাইরে অন্য কোনো সিনেমা তৈরি করতে চান। তাই এ ধরণের নির্মাতার জন্য বাজেটের ১০ শতাংশ ব্যাংক হিসেবে থাকা সহজসাধ্য কোনো বিষয় নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্পিচিংয়ের মাধ্যমে একজন নির্মাতা বা প্রযোজক কেন ছবিটি নির্মাণ করতে চান, কীভাবে নির্মাণ করতে চান─ যে নিয়মটি আছে সেটি ঠিকঠাক। কিন্তু একজন নবীন নির্মাতার জন্য কিন্তু ব্যাংকে জমা টাকা থাকার ব্যাপারটি চাপ। এটা আমি জানি না, কারা কেন একটা অর্থনৈতিক বিষয় বেঁধে দিয়েছেন। এটা বরং অনেক নির্মাতাকে সংকুচিত করবে আবেদনে।’

অনুদান সুস্থধারার নির্মাতাদের জন্য সরকারের তরফ থেকে পুরস্কার─ এমনটা উল্লেখ করে নির্মাতা খন্দকার সুমন সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজার সাধারণত সুস্থধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ করে না বলেই তো এ পুরস্কার দেওয়া হয়। কোনো পুরস্কারের জন্য কেবল যাচাই-বাছাই হতে পারে সম্ভাব্য পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রযোজনা সংস্থা এবং নির্মাতার ওই চলচ্চিত্র নির্মাণে সক্ষমতা আছে কিনা। দুঃখজনক হলেও সত্য একটি পুরস্কার বণ্টনকে আমাদের নীতিনির্ধারকরা টেন্ডারে রূপান্তরিত করেছে। এ যেন দরপত্র আহবান করে আর্থিক সিকিউরিটি চাওয়ার মতো। এতে করে পুঁজিবাজারের প্রযোজকদের পথ সুগম হচ্ছে। কিন্তু যেসব প্রযোজক কিংবা নির্মাতারা কেবল সুস্থধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চায় তাদের সামনে আইসবার্গ তৈরি করা হচ্ছে। অথচ এই নির্মাতারা চলচ্চিত্রের জন্য কোনো প্রকার পুঁজিবাজারের সহযোগিতা পায় না বলেই সরকারের অনুদানপ্রার্থী।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনুদানের এমন উদ্ভট নীতিমালার প্রতিবাদে আমি এ বছর অনুদানের জন্য আবেদন করছি না।’

২০২৪-২৫ এ পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য চিত্রনাট্য আহ্বান করা হয়েছে। যার সর্বশেষ সময় ২২ এপ্রিল। পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান কমিটির সদস্য আকরাম খানও নীতিমালার ধারাটির সঙ্গে একমত নন। তিনি নীতিমালা প্রণয়নকারীদের এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ ব্যাপারে ব্যক্তিগত আলাপে আপত্তি জানিয়েছেন বলে জানালেন। সামনের কোনো মিটিংয়েও এ ব্যাপারে কথা বলবেন বলে জানালেন।

সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘এটা স্বাধীন চলচ্চিত্রের পরিপন্থি বা অন্তরায় বলব। যে কিনা প্রথাবিরোধী কিংবা শৈল্পিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করবে, সে সাধারণত তরুণ হয়। আর তার ব্যাংকে সিনেমার বাজেটের ১০ শতাংশ থাকাটা অস্বাভাবিক। আবার যারা জীবন ঘনিষ্ঠ বানাবেন, সেগুলোর খুব একটা পুঁজিও সাধারণত থাকে না। যার কারণে নির্মাতারাই প্রযোজক হিসেবে প্রস্তাব দেয়। অনেক সম্ভাবনাময় পরিচালকের চিত্রনাট্যই বাদ পড়ে যাচ্ছে ৬.৫ ধারার জন্য। সেক্ষেত্রে দেখা যাবে তুলনামূলকভাবে কম মেধাবী একজন জমা দিতে পারবে টাকা থাকার কারণে। এটা তো তেল মাথায় তেলই দেওয়া হলো। কিন্তু অনুদান তো প্রতিষ্ঠিত লোকদের জন্য না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি আসলে একটা সংকট। এটা নীতিমালা প্রণয়নকারীরা বুঝে নাই। কারণ, এর আগে অনেকে টাকা নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করেনি। এ জিনিসটাকে ঠেকানোর জন্য হয়তো ভাবছে, এরকম একটা ধারা নীতিমালার মধ্যে দিলে ভালো। কিন্তু যারা নির্মাণ করেননি তাদের বেশিরভাগই মেধাবী নির্মাতা নন। তারা অন্যান্য কোনো পন্থায় অনুদান নিয়েছে। সত্যিকারের পরিচালক টাকা পেয়ে ছবি বানাবে না, এটা হয় না কখনও। এ নীতিমালার মধ্যে অনেকগুলো ভালো ভালো দিক রয়েছে। এ ধারাটি স্বাধীন নির্মাণের অন্তরায়। আমি আশা করি এ ধারাটি পরবর্তী সময়ে উঠে যাবে।’

সারাবাংলা/এজেডএস/পিটিএম

১০ শতাংশ ব্যাংকে জমা
আকরাম খান
খন্দকার সুমন
চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান
নুরুল আলম আতিক
পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র
বাজেট

OR

Scroll to Top