ক্র্যাম্পে শরীরে বিদ্রোহ, হৃদয় ছোঁয়া সেঞ্চুরি

ক্র্যাম্পে শরীরে বিদ্রোহ, হৃদয় ছোঁয়া সেঞ্চুরি

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৪৭ | আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:০০

১১৮ বলে ১০০ রান করেছেন তাওহিদ হৃদয়

বাংলাদেশের ইনিংসের তখন ৪৯ তম ওভারের খেলা চলছে। হার্শিত রানার করা দ্বিতীয় বলটা তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে লাগল ডান পায়ের প্যাডে। বেশ ব্যথাই পেলেন মনে হলো দেখে। ব্যথা ভুলে বেশি হতাশ হলেন ঠিকমতো টাইমিং না হওয়াতে। ধারাভাষ্যকক্ষে দীনেশ কার্তিক বলে উঠলেন, ‘ইটস নট ইজি বিইং হৃদয় নাও।’ দীনেশ কার্তিক নিজে ক্রিকেটার ছিলেন বলেই হয়তো হৃদয়ের সেই ক্র্যাম্পের বেদনাটা বুঝতে পেরেছিলেন।

দুবাইয়ের গরমে ভারতের বিপক্ষে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দীর্ঘ ১৮৫ মিনিট ব্যাট করে ততক্ষণে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত হৃদয়। শরীর আর চলছিল না, তবুও চোয়াল শক্ত করে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এই ব্যাটার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। দৌড়ে রান নেয়া তো দূর, ক্র্যাম্পের জন্য দাঁড়িয়েই থাকতে পারছিলেন না। যদিও ব্যক্তিগত ৯৯ রানে পৌঁছানোর সময় পয়েন্ট অঞ্চল থেকে একটা সিংগেল নিতে গিয়ে পায়ের ব্যথা ভুলে যেভাবে দৌড়েছেন, উইকেটটা বাঁচানোর জন্য যেভাবে ডাইভ করেছেন! সেই মুহূর্তটাই বলে দেয় হৃদয়ের নিবেদনের মাত্রা।

প্রায় ঘণ্টা তিনেকের ব্যাটিংয়ের পর প্রাণশক্তি অনেকটাই ক্ষয়ে এসেছিল হৃদয়ের। ব্যক্তিগত ৯১ রানে পৌঁছে একটা বল খেলেই সটান শুয়ে পড়লেন পপিং ক্রিজে। হেলমেট খুলে উইকেট শুয়ে হাঁসফাঁস করছিলেন বুকভরে একটু শ্বাস নেয়ার জন্য। বাম পায়ে টানটা একটু বেশিই লেগেছিল কিনা, মাথা তুলে দেখার চেষ্টাও করছিলেন। ছুটে আসলেন ফিজিও। উইকেটের ওপরই চলল মিনিট পাঁচেকের শ্রুশ্রুষা। ফিজিও আর পানি নিয়ে আসা নাহিদ রানা তাকে টেনে ধরে দাঁড় করালেন কোনোভাবে। খানিকটা পানি খেয়ে শুরু করলেন ব্যাটিং।

এভাবেই শুয়ে পড়েছিলেন হৃদয়

৯১ থেকে ৯৫ তে গেলেন মোহাম্মদ শামিকে কভার দিয়ে শ্ল্যাস করে একটা চার মেরে। পরের পাঁচটা সিংগেলকে সম্ভবত হৃদয় আলাদা করে মনে রাখতে চাইবেন। সেই পাঁচটা রান হৃদয় তুলেছেন কোনোরকমে হেঁটে আর দুলকি চালের দৌড়ে উইকেটের অপর প্রান্তে গিয়ে। তাসকিনকেও আলাদা করে ধন্যবাদ চাইলে দিতেই পারেন হৃদয়। এই বাঁহাতি টেইলএন্ডার ওভাবে সঙ্গ না দিলে প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটা অধরাও থেকে যেতে পারত। আর প্রাণ নিংড়ে দিয়ে প্রথম সেঞ্চুরিটাও এলো দলের চরম দুঃসময়ে। সব মিলিয়ে পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেঞ্চুরি পেলেন তিনি। এর আগের চারজন শাহরিয়ার নাফিস, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউলাহ রিয়াদ।

অবশ্য টপ অর্ডারের ব্যাটাররা আজ রান পেলে, আরেকটু দায়িত্ব নিয়ে খেললে হৃদয়ের ওপর হয়তো পাহাড় সমান চাপ আসতো না। শরীরজুড়ে ক্র্যাম্পের বিদ্রোহও হয়তো সহ্য করতে হতো না।  ৯ ওভারের মধ্যে ৩৫ রানেই আজ পড়েছিল পাঁচ উইকেট। তিন ব্যাটার ফিরেছেন শূন্যতে। তানজিদ তামিম করেছেন ২৫। সেই তাসের ঘরের মতো ধ্বসে পড়া ব্যাটিং অর্ডারের সূক্ষ্ম সুতোটাকে শক্ত হাতে ধরে রেখেছিলেন হৃদয়, সাথে নিয়ে জাকের আলীকে। রেকর্ড জুটিতে দুজন আজ নাম লিখিয়েছেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসে। ষষ্ঠ উইকেটে ১৫৪ রানের জুটিতে ভেঙেছেন ১৯ বছর আগে মার্ক বাউচার-জাস্টিন কেম্পের গড়া রেকর্ড। ২০০৬ সালে এই দুই প্রোটিয়া ব্যাটার গড়েছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩১ রানের জুটি।

জাকের ফিরেছেন ৬৮ রানে ক্যাচ দিয়ে। তবে নবম ওভারে ব্যাট হাতে মাঠে আসা হৃদয় ছিলেন একদম শেষ ওভারে, ইনিংসের দুই বল বাকি থাকা পর্যন্ত। হার্শিত রানার বলে শামির হাতে ক্যাচ দেয়ার আগে ১১৪ বলে দুই ছক্কা আর ছয়টি চারে ছুঁয়েছেন সেঞ্চুরি। উইকেটে এসেই দেখেছেন মুশফিককে ফিরিয়ে অক্ষরকে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগাতে। ভারতের স্পিন ত্রয়ীকে সামলেছেন, জবাব দিয়েছেন তাদের টার্ন, লুপ, ফ্লাইটেড ডেলিভারির। ক্র্যাম্পের জন্য একটা পর্যায়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি, তবুও থামেননি শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত।

দলকে এনে দিয়েছেন একটা লড়াই করার মতো সংগ্রহ। বাঁচিয়েছেন অল্পতে গুটিয়ে যাওয়া থেকে। ২২৮ রানের পুঁজি নিয়ে লড়ছে বাংলাদেশ। যে পুঁজিটা এসেছে জাকেরের সাথে রেকর্ড জুটির পর হৃদয়ের ‘হৃদয় ছোঁয়া’ সেঞ্চুরিতে।

সারাবাংলা/জেটি

আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫
তাওহিদ হৃদয়
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

OR

Scroll to Top